নাম ‘সততা স্টোর’। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সততার ধারণা দিতে এবং এর চর্চা করতে ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা হয় ‘সততা স্টোর’। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গঠন করা হয় ‘সততা সংঘ’। যে উদ্দেশ্যে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা সফল হয়েছে কিনা বা কতটুকু সফলতা পেয়েছে তা জানার চেষ্টা করে বাংলা ট্রিবিউন। এই অনুসন্ধানে উঠে আসে বিস্ময়কর তথ্য।
দেখা গেছে, সততা চর্চা শেখানোর কার্যক্রম মূলত কাগজে কলমে, সভা সেমিনারে আটকে থাকা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সততা স্টোর নিয়ে কোনও অসততা ও অনৈতিকতার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সরেজমিন কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাওয়া গেছে অসততা ও অনৈতিকতার অবিশ্বাস্য চিত্র।
সততা স্টোর কী?
‘সততা স্টোর’ হচ্ছে বিক্রেতাবিহীন দোকান। এসব দোকানে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বিস্কুট, চিপস, চকলেট ইত্যাদি রাখা হয়। প্রতিটি সততা স্টোরে পণ্যের মূল্য তালিকা, পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য ক্যাশ বাক্স রাখা হয়। থাকে না শুধু বিক্রেতা। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিজেরাই ক্যাশ বাক্সে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে– এটাই নিয়ম। এমনটাই ছিল দুদকের শিক্ষার্থীদের সততা চর্চা শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ।
দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
গত ২০ মার্চ (২০২৩) রাষ্ট্রপতির কাছে ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে সততা স্টোরের বিষয়ে অসততা ও অনৈতিকতার কোনও অভিযোগ আসেনি। শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছতা ও সততা কমিশনকে আশান্বিত করছে। কমিশনের উদ্যোগ ছাড়াও কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপন করছেন।
কিন্তু দুদকের প্রকাশ করা তালিকা অনুযায়ী কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেওয়া হয়। সরেজমিন ঘুরে পাওয়া যায় কিছু অসততার বিচিত্র তথ্য।
বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুল
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের বেঙ্গলী মিডিয়াম স্কুল। দুদকের সততা স্টোরের তালিকা অনুযায়ী গত ২ মে (২০২৩) স্কুলটিতে গিয়ে সততা স্টোরের কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে কথা হয় স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দাসের সঙ্গে। সততা স্টোর নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ‘খুবই তিক্ত ও বিচিত্র’ বলে দাবি করেন তিনি। নারায়ণ চন্দ্র দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুদকের চিঠি পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সততা স্টোর চালু করা হয়েছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। কয়েক মাসের মধ্যেই স্টোর খালি। স্টোরে রাখা বক্সে যা কিছু টাকা ছিল, সেই টাকাও একদিন উধাও। তালা ভেঙে নিয়ে যায় কে বা কারা।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সততা স্টোরে রাখা খাতা, পেন্সিল, কলম ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ টাকা না দিয়েই নিয়ে গেছে শিক্ষার্থীরা। এতে টান পড়ে সততা স্টোরের পুঁজিতেও। ১০ হাজার টাকা লস হয় আমাদের। এ উদ্যোগটি শুরুতে ভালো লেগেছিল, কিন্তু তিক্ত অভিজ্ঞতায় সেটা আর চালু করা হয়নি। ভবিষ্যতে চালু করলেও সিসি ক্যামেরা লাগাতে চাই আমরা।
নারায়ণ চন্দ্র দাসের অভিযোগ, সততা স্টোর চালুর জন্য একটা চিঠি দিয়েই দুদক তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। কোনও তদারকি ও সহযোগিতা নেই। মাঝে মধ্যে ফোন দিয়েই দায় সারতে চায় তারা। এই শিক্ষক মনে করেন, দুদকের উদ্যোগে কিছুদিন পরপর সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করে শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন দিতে হবে। পাঠ্যবইয়ে দুর্নীতিবিরোধী চ্যাপ্টার রাখার বিষয়টিকেও তিনি গুরুত্ব দিতে বলেন। এছাড়া পারিবারিক শিক্ষার ওপরও জোর দেন তিনি।