রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও তার মতো যারা হত্যার হুমকি দেয়, মানুষ পুড়িয়ে মারে- এরাই বিএনপির আসল নেতা। এসব হত্যার হুমকি ও হত্যার রাজনীতিই বিএনপির চরিত্র। বিএনপির জন্ম সেনা ছাউনিতে হত্যা, ক্যু ষড়যন্ত্র বিএনপির জন্মগত বৈশিষ্ট্য। আমাদের সবার স্মরণে আছে, এই রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির মন্ত্রী ও এমপিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাভাইদের উত্থান হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তা অস্বীকার করেছিল। গত ১৪ বছরে বিএনপি নানা হুমকি ধমকি দিচ্ছে; সরকার পতনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের স্মৃতি কেউ ভোলেনি। চারদলীয় জোট সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এখন এই সময়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে তারা আসলে সেই হত্যার রাজনীতির প্রতিভূ হিসেবেই তাদের চরিত্র বারবার প্রকাশ করছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিএনপি এই দেশে যুদ্ধাপরাধী, দেশবিরোধী দলছুটদের দল হিসেবে প্রমাণিত। এখনও তাদের বংশধররাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসবের প্রমাণ ও উদাহরণ দেশের মানুষ অবগত।
‘ঈদের পরে আন্দোলন’- এই কথা এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। ১৪ বছরে তাদের নৈতিক কোনও পরিবর্তন হয়নি, যা চাঁদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। তাদের ভিশন ২০৩০-এর মতো ২৭ দফা, ১০ দফা জনমানুষের মনকে জয় করতে পারেনি। ‘সরকারের বেশি সময় নাই-সরকার পতন অচিরেই’- এসব স্লোগান এখন রাজনীতির মাঠে অচল হয়ে পড়েছে।
বিএনপি নেতারা ছুটছেন লন্ডনে, কেউ যাচ্ছেন গুলশানে- এই নিয়ে তাদের ভিতরে ভিতরে নানা দ্বন্দ্ব। টেক ব্যাক বাংলাদেশ স্লোগান নিয়ে রাজনীতির ময়দান গরম হচ্ছে না। কারণ, এই টেক ব্যাকের আড়ালে যে পুরাতন অপকর্ম, সন্ত্রাস ও পরাজিত শক্তির আস্ফালনের ফিরে আসা, হাওয়া ভবনের ফিরে আসা- তা সবাই বুঝে গেছে। যাদের অতীত অপকর্ম পাহাড়সম তাদের বিশ্বাস করবে না কেউ। টেক ব্যাক মানে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন, টেক ব্যাক মানে আবার হাওয়া ভবন, আবার জঙ্গিবাদের মদত, আবার গ্রেনেড হামলা, টেক ব্যাক মানে আবার লুকিং ফর শত্রুস। টেক ব্যাকের নামে বিএনপি আবারও দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাতে চায়, এক রাতে হাজার হাজার নারীকে নির্যাতন করতে চায়- ফিরে যেতে চায় তাদের সেই দুঃশাসনে।
প্রতিদিন বিএনপি নেতারা নানা কথা বলে, কয়েকটি গণমাধ্যমে তা বড় করে প্রচার করে যেন তারাই বিএনপির প্রচারযন্ত্র। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্ব এত প্রচারের পরও বাকস্বাধীনতা নাই বলে দেশে বিদেশে অপপ্রচার করেই চলেছে। সারা দিন অসত্য বিবৃতি ও বক্তৃতাদানের পরও যে দল বলে বাকস্বাধীনতা নাই, তাদের চরিত্রই হলো সত্যকে অস্বীকার করা ও বিরোধিতার নামে বিরোধিতা করা, যা তাদের মজ্জাগত।
সম্প্রতি বিএনপি নেতারা বিলুপ্ত “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে দাবি করছে কিন্তু তাদের নিজেদের বক্তব্য তারা এখন নিজেরাই ভুলে গেছে। এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি নেত্রীর কয়েকটি বক্তব্য উপস্থাপন করতে চাই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার জনসভায় বলেছিলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অগণতান্ত্রিক দাবি গ্রহণযোগ্য নয়”। এরপরে ১৯৯৫ সালের ৫ নভেম্বর চাঁদপুরের জনসভায় বলেছিলেন, “সংসদীয় গণতন্ত্রে অনির্বাচিত ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না”।
তার কয়েক দিন পর খালেদা জিয়া ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর যশোরের জনসভায় ” তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী সংবিধানবিরোধী”। এমনকি ২০০৭ সালের ১ জুলাই নিউ ইয়র্কে এক টেলিকনফারেন্সে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “মানুষ একদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি চাইবে”।
বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯০-এর তিন জোটের রূপরেখা নিয়ে প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছিল। সেই রূপরেখায় যা ছিল তা পরে বিএনপি বাস্তবায়ন করেনি।
এখন সেই মৃত ব্যবস্থায় তারা ফিরে যাওয়ার নামে আসলে নিজেদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার পন্থা অবলম্বন করে যাচ্ছে। বিএনপির হুমকি-ধমকি এখন কেউ বিশ্বাস করে না। তবে তাদের আসল চরিত্র পুনরায় চাঁদ প্রকাশ করে দিয়েছে। সুযোগ পেলেই সেই সাপের মতোই বিষদাঁত দিয়ে ছোঁ মারবে। তাদের কতিপয় নেতার লন্ডন সফরের পর নতুন করে সহিংস রাজনীতি আবার শুরু করে দিয়েছে। ২৩ মে তারা ধানমন্ডিতে বাসে আগুন দিয়েছে। এর আগেও গত বছরের শেষ দুই মাসে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিকে দেশে সহিংসতা করেছে। তারা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও মিথ্যাচারের রাজনীতি করেছিল।
গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি নামসর্বস্ব দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল। এখন তাদের জোট গঠনে চিড় ধরেছে। কয়েকটি উগ্র বাম ও জনবিচ্ছিন্ন দলকে এই নতুন জোট গঠনে নেওয়া হয়েছে, যাদের কোন জনসমর্থন নাই। এদের সমর্থক দিয়ে ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব না। নীতিহীনদের নীতি কথার বাগাড়ম্বর এখন কেউ আমলে নেয় না। বিএনপির এই নতুন জোট মূলত আওয়ামী লীগবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী ও নব্য দেশবিরোধীদের জোট। এদের আন্দোলন হল বিদেশে দেশকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা। সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন দূতাবাসে ঘন ঘন যাতায়াত অত্যন্ত দৃষ্টিকটু, যা প্রমাণ করে জনগণের চেয়ে যেন দূতাবাসগুলোই বিএনপির আপন। অথচ তারা ভুলে যায় যে নালিশ করে ভোট আদায় করা সম্ভব না। যদিও নালিশ করা বিএনপির স্বভাবজাত, খালেদা জিয়াও বিদেশি পত্রিকায় কলাম লিখে জিএসপি সুবিধা বন্ধের জন্য আবদার করেছিলেন। বিএনপির বিদেশি শাখার কর্তাব্যক্তিরা ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যান বিবৃতি দিয়েছে বলে মিথ্যাচার করেছিল। অবরোধের নামে বিএনপির নেতাকর্মীরা সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার নিরীহ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করেছিল, পেট্রোলবোমা বানানোর সময় ছাত্রদল নেতা বাপ্পী নিজ বোমায় মারা যায়- এসব অপকর্মই বিএনপির রাজনীতির চিরন্তন ধারা। সারা দিন তারা সরকারবিরোধী কথা বলে আসলে তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্যে। অপপ্রচারের মাধ্যমেই তারা রাজনীতি চালিয়ে যেতে চায়। বিদেশেও একই কাজ করে তাদের দলীয় সমর্থকরা, যেন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে। এসব অপচেষ্টা করে লাভবান হতে পারেনি বিএনপি। তাই একদফার নামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে চিরতরে সরাতে চায়।
বিএনপির ২৭ দফা, ১০ দফা, টেকব্যাংক বাংলাদেশ- এগুলোর আসল কথা হলো শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি, যা রাজশাহীর বিএনপির নেতা চাঁদ জনসম্মুখে বলে দিয়েছে। বিএনপি ও তাদের জোটদের একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা। বিএনপি নেতা চাঁদ বিএনপির চলমান (!) আন্দোলন ও বিভিন্ন বিবৃতির আসল সত্য প্রকাশ করে দিয়েছে। চাঁদের বক্তব্যই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।