২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর হুমকি

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ প্রকাশ্য জনসভায় বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। আবু সাঈদ চাঁদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আর ২৭ দফা, ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা— শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যা যা করার দরকার আমরা করবো ইনশাআল্লাহ।’ শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিতে এখন আর বিচলিত হই না। কারণ, সুযোগ পেলে এরা কবরস্থানে পাঠানোর হুমকি নয়, বহু আগেই দাফন করে ফেলতো। চাঁদরা একা নয়, এরা সংখ্যায় অনেক। ২০২১ সালে ২ মার্চ রাজশাহী বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে রাজশাহীর সাবেক মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘হাসিনা… রেডি হও। আজ সন্ধ্যার সময়, কালকে সকাল তোমার নাও হতে পারে। মনে নাই ’৭৫ সাল? ’৭৫ সাল মনে নাই?’

২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকাস্থ সেনবাগ জাতীয়তাবাদী ফোরাম আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ ১৫ আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘এ সরকার যদি জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে ৭৫-এর মতো পরিণতি বহন করতে হবে।’  চাঁদ যখন কবরে পাঠানোর হুমকি দেয়, তখন সেখানে অতিথি ও বক্তা হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা এবং সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

আবু সাইদ চাঁদের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সেলিমা রহমান এবং প্রধান বক্তা ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক রাসিক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। রাজশাহী বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, সাবেক এমপি অ্যাড. নাদিম মোস্তফা, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মতিউর রহমান মন্টু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মার্শাল প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন। এদের কেউ কি হত্যার হুমকির বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন? কিংবা বিএনপির তরফ থেকে কোনও বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে কি, এটি চাঁদের ব্যক্তিগত অভিমত? এর সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পর্ক নেই? বিএনপি এমন বক্তব্যকে অনুমোদন করে না? আমি এমন বিবৃতি দেখিনি। তার মানে এটি চাঁদের একার হুমকি নয়। হঠাৎ উত্তেজনার বশে চাঁদ এমন হুমকি দিয়েছে, তাও নয়। হামেশাই এরা এমন হুমকি দেয়। এরা স্লোগান দেয় ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। এই স্লোগানের মর্মার্থ সহজেই অনুমেয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ, ভাই শেখ নাসেরসহ ১৮ জনকে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠার’ অতি সহজ মানে হলো— ‘তখন বাংলাদেশে না থাকায় হত্যা করতে পারিনি, এখন যেকোনও সময় হত্যা করবো।’ যারা বলে দফা একটাই— ‘শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানো’, আর যারা স্লোগান দেয় ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ তারা তো একই গোষ্ঠী। এরা তো হত্যাকারীদের রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারী।

সম্পর্কিত

Scroll to Top